নববর্ষে মিষ্টিমুখ
মানব জীবনচক্রের নানা পর্যায়ে আমাদের সমাজে যেমন উৎসব-অনুষ্ঠানের রীতি প্রচলিত, তেমনি প্রকৃতি ও বর্ষপরিক্রমার নানান বাঁকে আছে উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন। বাঙালির বর্ষপরিক্রমায় শুধুমাত্র খাদ্যতালিকার বৈচিত্র্য খুঁজে পাবো আমরা নিচের লোকছড়াটিতে-
চৈত্রে গিমা তিতা
বৈশাখে নালিতা মিঠা
জ্যৈষ্ঠে কৈ
আষাঢ়ে ভোর পান্তা শ্রাবণে দৈ
ভাদ্রে তালের পিঠা আশ্বিনে শশা মিঠা
কার্তিকে ওল অঘ্রাণে খলসে মাছের ঝোল
পৌষে কাঞ্জি মাঘে তেল ফাল্গুনে গুড়-আদা-বেল।
বাঙালির বছর ধরে চলে উৎসব-অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে সবাই মিলিত হয় প্রাণের আবেগে। ষড়ঋতুর বর্ষ পরিক্রমায় ঋতুচক্রের সাথে সঙ্গতি রেখে লোকবাংলার যেসব আয়োজন সুদীর্ঘ কাল ধরে আমাদের গ্রাম-গঞ্জে নিয়মিত সেসব আয়োজন হয়ে আসছে।
বাঙালির বর্ষপরিক্রমার প্রথম এবং প্রধান উৎসব ‘নববর্ষবরণ’। বঙ্গাব্দের সূচনায় বাঙালি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে আয়োজন করে নববর্ষবরণ উৎসব। আমাদের সমাজের মানুষের ধারনা বছরের প্রথম দিন ভালো কাটলে সারা বছর ভালো কাটবে। নববর্ষে একজন অন্যের বাড়িতে গেলে সামর্থ অনুযায়ী তাকে আপ্যায়িত করে, মিষ্টিমুখ করায় এবং পরস্পরের সাথে কোলাকুলি করে। সাম্প্রতিক সময়ে নববর্ষ উপলক্ষে শহরে বৈশাখী মেলার আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন ইত্যাদি সারম্বরে পালিত হলেও গ্রামের অনুষ্ঠানের আয়োজন ভিন্নমাত্রার। নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামে কবাডি খেলা, দাড়িয়াবাঁধা খেলা, লাঠিখেলা, ষাঁড়ের লড়াই, ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি খেলার আয়োজন হয়। গৃহস্থ বাড়িতে গৃহপালিত প্রাণীদের ম্লান করানো হয়, কলকিতে রঙ লাগিয়ে গরু-ছাগলের গায়ে নকশা আঁকা হয় এবং ঘর-দুয়ার-উঠোন-আঙ্গিনা পরিস্কার পরিপাটি করা হয়। নববর্ষ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে। হালখাতার প্রস্তুতি চলে দু’দিন আগে থেকেই। দোকান-পাট দু’দিন আগে থেকেই ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয় এবং দোকানের মালামাল পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি পুনর্মূল্যায়িতও হয় নববর্ষে। হালখাতার অনুষ্ঠানকে গ্রামে বলা হয় পুণ্যি। পুণ্যি অনুষ্ঠানে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।
চৈত্রে গিমা তিতা
বৈশাখে নালিতা মিঠা
জ্যৈষ্ঠে কৈ
আষাঢ়ে ভোর পান্তা শ্রাবণে দৈ
ভাদ্রে তালের পিঠা আশ্বিনে শশা মিঠা
কার্তিকে ওল অঘ্রাণে খলসে মাছের ঝোল
পৌষে কাঞ্জি মাঘে তেল ফাল্গুনে গুড়-আদা-বেল।
বাঙালির বছর ধরে চলে উৎসব-অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে সবাই মিলিত হয় প্রাণের আবেগে। ষড়ঋতুর বর্ষ পরিক্রমায় ঋতুচক্রের সাথে সঙ্গতি রেখে লোকবাংলার যেসব আয়োজন সুদীর্ঘ কাল ধরে আমাদের গ্রাম-গঞ্জে নিয়মিত সেসব আয়োজন হয়ে আসছে।
বাঙালির বর্ষপরিক্রমার প্রথম এবং প্রধান উৎসব ‘নববর্ষবরণ’। বঙ্গাব্দের সূচনায় বাঙালি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে আয়োজন করে নববর্ষবরণ উৎসব। আমাদের সমাজের মানুষের ধারনা বছরের প্রথম দিন ভালো কাটলে সারা বছর ভালো কাটবে। নববর্ষে একজন অন্যের বাড়িতে গেলে সামর্থ অনুযায়ী তাকে আপ্যায়িত করে, মিষ্টিমুখ করায় এবং পরস্পরের সাথে কোলাকুলি করে। সাম্প্রতিক সময়ে নববর্ষ উপলক্ষে শহরে বৈশাখী মেলার আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন ইত্যাদি সারম্বরে পালিত হলেও গ্রামের অনুষ্ঠানের আয়োজন ভিন্নমাত্রার। নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামে কবাডি খেলা, দাড়িয়াবাঁধা খেলা, লাঠিখেলা, ষাঁড়ের লড়াই, ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি খেলার আয়োজন হয়। গৃহস্থ বাড়িতে গৃহপালিত প্রাণীদের ম্লান করানো হয়, কলকিতে রঙ লাগিয়ে গরু-ছাগলের গায়ে নকশা আঁকা হয় এবং ঘর-দুয়ার-উঠোন-আঙ্গিনা পরিস্কার পরিপাটি করা হয়। নববর্ষ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে। হালখাতার প্রস্তুতি চলে দু’দিন আগে থেকেই। দোকান-পাট দু’দিন আগে থেকেই ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয় এবং দোকানের মালামাল পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি পুনর্মূল্যায়িতও হয় নববর্ষে। হালখাতার অনুষ্ঠানকে গ্রামে বলা হয় পুণ্যি। পুণ্যি অনুষ্ঠানে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।
বর্ষবরণের আয়োজন ছাড়াও বর্ষপরিক্রমায় আমাদের গ্রামবাংলার নানা প্রান্তে আছে নানা আয়োজন। লক্ষ করলেই দেখা যাবে লোকবাংলার প্রতিটি আয়োজনের সাথে কৃষির একটা সংযোগ আছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে গ্রামে গ্রামে মানুষ আম কাঁঠাল দুধ খৈ নিয়ে আত্মীয় বাড়ি যায়, বিশেষত মেয়ের বাড়ি যায় এবং নিজেদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে গ্রামে গ্রামে ভরা নদীতে আয়োজন হয় নৌকাবাইচ; এই প্রতিযোগিতা কোনো কোনো ব্যক্তি এবং বংশের জন্য সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ভাদ্র মাসে মেয়েরা বাপের বাড়িতে নাইওর যায়। দীর্ঘদিন পর মেয়ের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত হয় সামাজিক নানান উৎসব-অনুষ্ঠান। ভাদ্রে তালের পিঠা, কার্তিক শেষে মশা-মাছি তাড়ানো এবং নতুন ফসলের মঙ্গল কামনা। কার্তিকের শেষ দিন বাড়ি থেকে অশুভ তাড়াতে খড়ের ‘বুইন্দা’য় আগুন দিয়ে বাড়ির চারপাশে প্রদক্ষিণ করে খড়ের ‘বইন্দা’টি নিজের ধানি জমিতে পুঁতে দেয়া হয়। বুইন্দা নিয়ে প্রদক্ষিণের সময় চিৎকার করে বলা হয়- ‘বালা আয়ে বুড়া যায় মশা-মাছির মুখ পুড়া যায়’। মানুষের ধারনা এই ধোঁয়ার মাধ্যমে মশা-মাছি-অশুভ পতঙ্গ বিনাশ হবে এবং ক্ষেতে অধিক শস্য ফলবে। অঘ্রাণে নতুন ধান ওঠে কৃষকের ঘরে ঘরে, চলে নবান্নের উৎসব। রাতভর ঢেঁকিতে ধানভানা, আর ধানভানার গীত। ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্যটি এখন অবশ্য নিতান্তই বিরল। পৌষে পিঠা-পায়েশ তৈরির ধুম। মাঘে শীত সকালে নাড়ার আগুনে নিজেদের সেঁকে নেয়া। চৈত্রে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা- বান্নির মেলা-চরকগাছ ইত্যাদি। শীতের রাতে গ্রামে গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে বসে কিসসাপালা, পুথিপাঠ, গাইনের গীত আর কীর্তণের আসর। সব মিলিয়ে আনন্দ-বেদনায় কেটে যায় আমাদের গ্রাম-বাংলার জীবনের প্রত্যহিকতা।
আমাদের বর্তমান রচনা বাংলা নববর্ষে মিষ্টিমুখ নিয়ে। আগেই বলেছি লোকবাংলার বর্ষবরণ আর নগরসংস্কৃতির নববর্ষ বরণের পার্থক্য নিয়ে। বাঙালির নাগরিক জীবনে নববর্ষে পান্তা-ইলিশ, পাটশাক, শুটকি ভর্তা (চ্যাপা শুটকি/ হিদল ভর্তা) সম্প্রতি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে; যার সাথে লোকজীবনের সামান্য মিলও নেই; যে মিলটি সর্বত্র বিরাজমান তা হলো ‘মিষ্টিমুখ’। সামর্থ অনুযায়ী দেশজুড়ে বাঙালি নববর্ষে মিষ্টিমুখ করতে চায়। নববর্ষে বাঙালির মিষ্টি খাওয়ায় অভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী সেই গানের বাণী আমরা অন্তরে কতটা ধারণ করি সে প্রশ্নটি কখনো কি নিজেকে করেছি? কখনো কি নিজের ভেতরের অন্ধকারটি সরিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছি আমরা? না-কি গান গেয়ে পরক্ষণেই ভুলে গেছি তার মর্মকথা?
এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাপসনিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ॥
আমাদের বর্তমান রচনা বাংলা নববর্ষে মিষ্টিমুখ নিয়ে। আগেই বলেছি লোকবাংলার বর্ষবরণ আর নগরসংস্কৃতির নববর্ষ বরণের পার্থক্য নিয়ে। বাঙালির নাগরিক জীবনে নববর্ষে পান্তা-ইলিশ, পাটশাক, শুটকি ভর্তা (চ্যাপা শুটকি/ হিদল ভর্তা) সম্প্রতি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে; যার সাথে লোকজীবনের সামান্য মিলও নেই; যে মিলটি সর্বত্র বিরাজমান তা হলো ‘মিষ্টিমুখ’। সামর্থ অনুযায়ী দেশজুড়ে বাঙালি নববর্ষে মিষ্টিমুখ করতে চায়। নববর্ষে বাঙালির মিষ্টি খাওয়ায় অভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী সেই গানের বাণী আমরা অন্তরে কতটা ধারণ করি সে প্রশ্নটি কখনো কি নিজেকে করেছি? কখনো কি নিজের ভেতরের অন্ধকারটি সরিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছি আমরা? না-কি গান গেয়ে পরক্ষণেই ভুলে গেছি তার মর্মকথা?
এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাপসনিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ॥
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক ॥
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক ॥
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক ॥
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক ॥
No comments